সন্ত্রাসীদের চিরবিদায়ে দৃঢ় প্রত্যয়ী বাংলাদেশ
আ.লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং এর সকল সহযোগী সংগঠনের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ সোমবার সোমবার (১২ মে,২০২৫ ইং) বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যেকোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
রবিবার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সন্ত্রাস দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি বা সত্তার (সংগঠন) সকল প্রকার কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করে। পূর্ববর্তী আইন অনুযায়ী, যদি কোনও ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, তাহলে সরকার সেই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারত অথবা বিজ্ঞপ্তি জারি করে তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারত। সত্তার কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করার কোনও বিধান ছিল না। নতুন অধ্যাদেশে বলা হয়েছে যে, সত্তার সমস্ত কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করা যেতে পারে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী, 'সত্তা' বলতে এক বা একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত যেকোনো সংস্থাকে বোঝায়, যার মধ্যে একটি আইনি সত্তা, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, বাণিজ্যিক বা অ-বাণিজ্যিক সংস্থা, গোষ্ঠী, অংশীদারিত্ব, সমবায় সমিতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এর আগে, শনিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধন অনুসারে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যেকোনো রাজনৈতিক দল, তার সহযোগী বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারে।
এছাড়াও, সেদিন উপদেষ্টা পরিষদের সভায় দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার লক্ষ্যে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম, সাইবারস্পেসসহ, নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যতক্ষণ না বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর নেতাদের বিচার সম্পন্ন হয়। এছাড়াও, উপদেষ্টা পরিষদের সভা ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এখন, তারই ধারাবাহিকতায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর নেতাদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপনে যা বলা আছে
“২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠনের পর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য ও ভিন্নমতের মানুষের ওপর হামলা, গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন নিপীড়নমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।“
“বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিরুদ্ধে গত ১৫ জুলাই থেকে ০৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গুম, খুন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কার্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং এসব অভিযোগ দেশি ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেহেতু উল্লিখিত অপরাধগুলোর অভিযোগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং দেশের ফৌজদারি আদালতে বহুসংখ্যক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।“
“যেহেতু এসব মামলার বিচারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, বাংলাদেশের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার লক্ষ্যে গত ০৫ আগস্ট ২০২৪ খ্রি. পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, উসকানিমূলক মিছিল আয়োজন, রাষ্ট্রবিরোধী লিফলেট বিতরণ এবং ভিনদেশে পলাতক তাদের নেত্রীসহ অন্য নেতাকর্মী কর্তৃক সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অপরাধমূলক বক্তব্য প্রদান, ব্যক্তি ও প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের প্রচেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, দলটি এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলার বাদী ও সাক্ষীদের মনে ভীতির সঞ্চার করা হয়েছে ও এভাবে বিচার বিঘ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।“
“যেহেতু সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকাসহ জনমনে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশে সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো বিভিন্ন বেআইনি কার্যকলাপ ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। যেহেতু সরকার যুক্তিসংগতভাবে মনে করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা-১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটি এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সমীচীন।“
“বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।“
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
আরও জানুন- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণায় শাহবাগে ছাত্র-জনতার উল্লাস
বাংলাদেশ এর আরো খবর

পুলিশকে জনবান্ধব করার প্রত্যয় / পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র থাকবে না, র্যাব পুনর্গঠন করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ: খুশিতে গরু জবাই করে খাওয়ালেন শিশু বক্তা মাওলানা রফিকুল ইসলাম

বাংলাদেশে হচ্ছেনা ফ্যাসিস্টদের ঠাই / আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণায় শাহবাগে ছাত্র-জনতার উল্লাস

আরেক 'জুলাই' এর প্রতিধ্বনি / গণহত্যাকারী দল 'আওয়ামীলীগ' নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতার স্লোগানে উত্তাল শাহবাগ

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে বাফার স্টেট বাংলাদেশ? / ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: সীমান্ত জেলার এসপিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ বাংলাদেশ আইজিপির
