নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ মন্তব্যে আরব দেশগুলোর তীব্র নিন্দা
আনাদোলু এজেন্সি

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর “গ্রেটার ইসরায়েল” ধারণা নিয়ে বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে একাধিক আরব দেশ। তারা একে রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি হানিকর বলে মন্তব্য করেছে।
মঙ্গলবার ইসরায়েলি চ্যানেল i24-এ দেয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি “গ্রেটার ইসরায়েল” ধারণার সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত এবং নিজেকে “ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক মিশনে” নিয়োজিত মনে করেন। তার ভাষায়, “যারা শতাব্দী ধরে এখানে আসার স্বপ্ন দেখেছেন এবং যারা ভবিষ্যতে আসবেন—তাদের জন্যই এই মিশন।”
“গ্রেটার ইসরায়েল” বলতে সাধারণত ইসরায়েলের ভূখণ্ড পশ্চিম তীর, গাজা, সিরিয়ার গোলান মালভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত করার ধারণা বোঝায়। কিছু ব্যাখ্যায় এতে মিশরের সিনাই উপদ্বীপ ও জর্ডানের কিছু অংশও অন্তর্ভুক্ত।
মিশর এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করে জানিয়েছে, এ ধরনের মন্তব্য আঞ্চলিক শান্তি প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং অস্থিরতা বাড়ায়। কায়রো জোর দিয়ে বলেছে, একমাত্র শান্তির পথ হলো গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করে ১৯৬৭ সালের সীমানার ভিত্তিতে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
জর্ডান এ বক্তব্যকে “বিপজ্জনক ও উসকানিমূলক” আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন। জর্ডান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরায়েলের উসকানিমূলক পদক্ষেপ ও বক্তব্য অবিলম্বে থামাতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নেতানিয়াহুর মন্তব্যকে “ফিলিস্তিনিদের বৈধ অধিকারের প্রতি অবজ্ঞা” এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে। তারা ১৯৬৭ সালের সীমানায় পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
ইয়েমেন এ বক্তব্যকে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাবের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে এবং সতর্ক করেছে যে এই নীতি আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়াবে।
কাতার একে “অহংকার ও দখলদারিত্বের নীতি” হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে এবং ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
সৌদি আরব ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের “বিস্তৃততাবাদী প্রকল্প” প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক ও আইনি অধিকারকে সমর্থন করেছে।
আরব লীগ এ মন্তব্যকে “আক্রমণাত্মক ও সম্প্রসারণবাদী প্রবণতা” হিসেবে আখ্যা দিয়ে সমষ্টিগত আরব জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি বলেছে।
ওআইসি (ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা) জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর বক্তব্য ইসরায়েলের দখলদারিত্বের দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার লঙ্ঘনের ইঙ্গিত। সংস্থাটি সতর্ক করেছে যে এ ধরনের উপনিবেশবাদী ভাষণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য হুমকি এবং সংঘাত দীর্ঘায়িত করবে।
হামাস বলেছে, এই বক্তব্য ইসরায়েলের ফ্যাসিবাদী চরিত্র এবং তার সম্প্রসারণবাদী পরিকল্পনার স্পষ্ট প্রমাণ, যা কোনো রাষ্ট্রকেই বাদ দেবে না।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গাজায় হামলায় এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার ৭০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের প্রায় অর্ধেক নারী ও শিশু। গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (ICJ) মামলা চলছে।
আন্তর্জাতিক এর আরো খবর

নিউইয়র্ক পুলিশের নিয়ন্ত্রন নেবে ফেডারেল সরকার: মোতায়েন করা হবে হাজারো ন্যাশনাল গার্ড - ট্রাম্পের ঘোষণা

ট্রাম্পের প্রাক্তন উপদেষ্টা বোলটনের বাড়িতে এফবিআই অভিযান

নিজ সন্তানকে হত্যা করে ভারতে পালানো আমেরিকান নারীকে আটক করল এফবিআই

সাড়ে ৫ কোটিরও বেশি বিদেশীর ভিসা খতিয়ে দেখবে ট্রাম্প প্রশাসন

মার্কিন সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শরিফুল এম খান
