খালাসের পর পরই ফের গ্রেপ্তার পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবি
পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে শনিবার তোশাখানা সম্পর্কিত একটি নতুন মামলায় জাতীয় জবাবদিহি ব্যুরো (এনএবি) গ্রেপ্তার করেছে। কয়েক ঘণ্টা আগে তারা ইদ্দত মামলায় খালাস পান।
এনএবির ডেপুটি ডিরেক্টর মহসিন হারুনের নেতৃত্বে একটি দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান এবং বুশরা বিবিকে আদিয়ালা জেল থেকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের উদ্বোধনী বক্তব্যও রেকর্ড করা হয়।
এছাড়াও ৯ মে মামলায় ইমরান খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশ সুপারের (এসপি) নেতৃত্বে লাহোর পুলিশের একটি দল আদিয়ালা জেলে পৌঁছেছে। তদন্তকারী অফিসার সহ দলটি তদন্ত পরিচালনার জন্য রাওয়ালপিন্ডির সন্ত্রাসবিরোধী আদালত (এটিসি) থেকে অনুমতি পেয়েছে। তদন্ত শেষ করে পিটিআই কর্মীদের গ্রেফতার করবে পুলিশ। এর আগে একই দিনে ইসলামাবাদ জেলা ও দায়রা আদালতে ইদ্দত মামলায় বেকসুর খালাস পান এই দম্পতি।
রায়ের পর আদালতের বাইরে পিটিআইয়ের আইনজীবী, নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আনন্দ উদযাপন করেন। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি বিচারিক আদালত তাদের বিয়ে অবৈধ প্রমাণিত হওয়ার পরে তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে পাঁচ লাখ পাকিস্তানি রুপি জরিমানা করে।
ইদ্দত মামলার রায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে কারাগারে পাঠানোর সর্বশেষ বিদ্যমান আইনি বাধা দূর করেছে। এর আগে দুটি তোশাখানা মামলায় তার সাজা স্থগিত করা হয়েছিল, সাইফার মামলায় ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (আইএইচসি) তাকে খালাস দিয়েছিল।
যাইহোক, ১০ জুলাই, সন্ত্রাসবিরোধী আদালত (ATC) লাহোর কর্পস কমান্ডারের বাসভবনে হামলা সহ ৯ মে দাঙ্গা সম্পর্কিত তিনটি মামলায় ইমরান খানের আগাম জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বুশরা বিবিকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে বিয়ে করেছিলেন। অনুষ্ঠানে শুধু কনের মা, বন্ধুবান্ধবসহ নিকটাত্মীয়রা উপস্থিত ছিলেন। ইমরান খানের বোনেরা অবশ্য উপস্থিত ছিলেন না। পরে গত বছর বুশরার প্রাক্তন স্বামী খাওয়ার মানেকা আদালতে অভিযোগ করেন যে ইমরান ও বুশরার বিয়ে অবৈধ এবং শরিয়া আইনের পরিপন্থী।
বুশরার তিন মাস ইদ্দত শেষ হওয়ার আগেই এই বিয়ে হয়েছিল। মানেকাও তাদের বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ এনেছেন।
এদিকে নতুন তোষাখানা মামলায় বুশরা বিবিকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে পিটিআই। তারা বলেন, “নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করা এবং বেআইনি কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য ন্যাবের লজ্জিত হওয়া উচিত! জঘন্যতম মামলার পর তারা এখন বুশরা বিবিকে আরেকটি ভুয়া মামলায় গ্রেপ্তার করতে চায়! এছাড়াও, দলটি আদালতকে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
পিটিআইয়ের আইনজীবী নাঈম হায়দার পাঞ্জুথা বলেন, আদিয়ালা কারাগারের কর্মীদের মুক্তির আদেশ জারি করা হয়েছে এবং দল অপেক্ষা করছে। এর পাশাপাশি তিনি আরও বলেন যে লাহোর হাইকোর্টে ইমরানের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে এটিসির বিরুদ্ধে একটি আবেদন করা হয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবির ইদ্দত মামলায় খালাস পেয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। জেল কর্তৃপক্ষ তাদের ছেড়েও দিয়েছে। কিন্তু জেলগেটেই আবারও গ্রেফতার হন তারা। সংরক্ষিত আসনে পিটিআইয়ের পক্ষে রায় দেওয়ার ২৪ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে, একটি দায়রা আদালত ইমরান খান এবং তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে খালাস দিয়েছিল।
এবার রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বিক্রির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হলেন তিনি। আদিয়ালা কারাগারের ৩ নম্বর গেট দিয়ে ছাড়া পেয়ে এ মামলায় বুশরা বিবিকেও পুনরায় গ্রেফতার করা হয়। ইমরান খানকে কারাগারে রাখার জন্য পাকিস্তানের বর্তমান সরকার সমালোচিত হচ্ছে।
একই সময়ে জাতিসংঘের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে যে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে আটক করা বেআইনি এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। একই সঙ্গে ইমরান খানের দ্রুত মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
