সম্পূর্ণ অন্ধদের পৃথিবীর আলো দেখাবে মাস্ক কোম্পানির আশ্চর্যজনক ডিভাইস “ব্লাইন্ডসাইট”
ইলেন মাস্কের কোম্পানি দাবি করেছে যে, এটি এমনকি জন্মান্ধদের দৃষ্টিশক্তিও ফিরিয়ে দেবে। ‘অন্ধদের জন্য আলো’। সম্পূর্ণ অন্ধদের জন্য বিশ্বকে আলোকিত করার পথে নিউরোলিংক। বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্কের কোম্পানি দাবি করেছে যে তাদের তৈরি ‘ব্লাইন্ডসাইট’। কার্যত অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। এই ডিভাইসটি দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেবে, এমনকি সম্পূর্ণ অন্ধদেরও। সম্প্রতি মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ব্লাইন্ডসাইটকে ‘ক্লিয়ারেন্স’ দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এমন উদ্ভাবন নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
যাইহোক, এই ডিভাইসটি ইনস্টল করার ফলে প্রথমে এটি সামান্য ঝাপসা ঝাপসা চিত্র দেখাবে। দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে উন্নত হলে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে দেখা যাবে।
তবে ইলন মাস্ক এর আগে বলেন যে, বানরদের মস্তিষ্কে ইমপ্লান্ট করার পর ব্লাইন্ডসাইট যন্ত্রটি কাজ করছে। নিউরালিংক ডিভাইস দ্বারা কোন বানর মারা যায়নি বা গুরুতর আহত হয়নি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা এই যন্ত্রের মাধ্যমে ইনফ্রারেড রে , অতিবেগুনি বা রাডার তরঙ্গও দেখতে পারে
আশ্চর্য যন্ত্র, যার মাধ্যমে বিজ্ঞান আলো দেখাবে সম্পূর্ণ অন্ধকে! প্রযুক্তি দিন দিন উন্নত হচ্ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। ট্রেন যদি পানির নিচে চলতে পারে, যন্ত্র যদি মঙ্গল গ্রহে যেতে পারে, মানুষ যদি চাঁদে যেতে পারে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান শরীরের সমস্ত নার্ভের অবস্থান নির্ণয় করতে পারে তাহলে বুঝতে পারবেন প্রযুক্তি কতটা উন্নত। তবে কেউ ভাবতে পারেনি যে, এবার বিজ্ঞান এতটা এগিয়েছে। সম্পূর্ণ অন্ধকে বিজ্ঞান আলো দেখাবে। আর সেই পথেই হলো নিউরালিংক (Neuralink)।
জানা গেছে, বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্কের কোম্পানি নিউরালিংক (নিউরালিংক) অসাধ্য সাধনের পথে। ‘ব্লাইন্ডসাইট’ ডিভাইসটি তৈরি করেছে বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের কোম্পানি। এটি কোন সাধারণ ডিভাইস নয়। এই ডিভাইসটি সম্পূর্ণ অন্ধদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে পারে। এমনকী, মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ইতিমধ্যেই অন্ধ দৃষ্টির জন্য ‘ছাড়পত্র’ দিয়েছে। এমনকি এই আবিষ্কারটি বৈজ্ঞানিক জগতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মাস্ক সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, “নিউরালিংকের ব্লাইন্ডসাইট (অন্ধদের জন্য দৃষ্টি) যন্ত্রটি এমন লোকদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেবে যারা চোখ এবং অপটিক নার্ভ উভয়ই হারিয়ে ফেলেছেন। এমনকি জন্মান্ধদের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স অক্ষত থাকলেই এই ডিভাইসটি তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেবে।”
তবে এ বিষয়ে জানানো যাক যে, ব্লাইন্ডসাইটই একমাত্র আবিষ্কার নয়। এছাড়াও Neuralink এর আগে আরও বিশেষ আবিষ্কার করতে দেখা যায়। এই সংস্থাটি ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । তারপর থেকে, মানুষের মস্তিষ্কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের কাজ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি, নিউরোলিংক মানুষের মস্তিষ্কে একটি চিপ বসাতে সক্ষম হয়েছে। এটি এমন একটি ডিভাইস যা মানুষকে সাহায্য করে ফোনে টাইপ করার জন্য আলাদা করে কিছু বলতে হবে না। এই চিপ মানবদেহে বসানো হলে মস্তিষ্কের সাহায্যে খেলাসহ অনেক সামাজিক পোস্ট করা যাবে। ডিভাইসটি এক ধরনের টেলিপ্যাথির মতো কাজ করবে।
এমনকি এই ডিভাইসটি কতটা সফল হয়েছে তার ভিডিওও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে। পোল্যান্ডের এক যুবক আট বছর আগে একটি দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছিলেন। ফলে তার বাম পাশ সম্পূর্ণ অবশ হয়ে যায়। আর চিপটি বসানো হয় তার মস্তিষ্কে। এই ব্যক্তির মাধ্যমে আবিষ্কারের সাফল্য দেখা যায়। তারপর থেকে এই চিপ মানুষের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে শুরু করে।
মাস্ক সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, ‘নিউরোলিংকের ব্লাইন্ডসাইট ডিভাইসটি এমন লোকদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেবে যারা চোখ এবং অপটিক নার্ভ উভয়ই হারিয়েছেন। এমনকি জন্মান্ধদেরও যদি ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স ঠিক থাকে, তাহলে এই ডিভাইসটি তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেবে।’
যাইহোক, ব্লাইন্ডসাইট একমাত্র নয়। নিউরোলিংক, প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা, মানুষের মস্তিষ্কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের জন্যও কাজ করছে। নিউরোলিংক ২০২১ সালে রিপোর্ট করেছে যে তারা দুটি বানরের মস্তিষ্কে চিপ বসিয়েছে এবং এটি পরীক্ষা করেছে। এদিকে নোল্যান্ড নামের ওই যুবকের আট বছর আগে দুর্ঘটনায় স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি হলে গত জানুয়ারিতে তার মস্তিষ্কে একটি চিপ বসানো হয়। এর ফলে মাস্কের সংগঠন তার লক্ষ্যের দিকে আরেক ধাপ এগিয়েছে।
প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের জগতে সাড়া ফেলেছে এই ঘটনা। সেই ব্যক্তি তার মস্তিষ্ক অর্থাৎ ‘টেলিপ্যাথি’ ব্যবহার করে ভিডিও গেম বা অনলাইন দাবা খেলতে সক্ষম। পরে মাস্ক লিখেছেন, ‘আমি মনে করি না কম্পিউটার মানুষের চেয়ে ভালো দাবা খেলে। কিন্তু আমার অনুমান হল আগামী ১০ বছরের মধ্যে দাবা খেলার সমস্ত রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে। যেমন একটি খেলা যেমন চেকার্স. পিটার নিলসেন, ভ্লাদিমির ক্রামনিকের মতো বিখ্যাত দাবা খেলোয়াড় ইলন মাস্কের বক্তব্যকে আংশিকভাবে সমর্থন করেন।
মানব মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করে জটিল স্নায়বিক সমস্যা সমাধানের জন্য বিশেষ প্রযুক্তির এই চিপ তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জটিল স্নায়বিক সমস্যার পাশাপাশি বিষণ্নতা ও সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।