ফিলিস্তিনী ভূখণ্ড থেকে মুছে যাবে ইসরাইল -হামাস নেতার হুঁশিয়ারি
হামাসের পলিট-ব্যুরোর নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার সতর্ক করেছেন যে, ইসমাইল হানিয়ার শাহাদত ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিরোধকে আরো অধিক শক্তিশালী করে তুলছে এবং ইসরায়েলকে ধ্বংসের কাছাকাছি নিয়ে যাবে। গত বুধবার মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন নেতার কাছে পাঠানো এক বার্তায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ইসমাইল হানিয়ার শাহাদাতের পর এই নেতারা শোক ও সমবেদনা জানাতে সিনওয়ারের কাছে বার্তা পাঠান। ইসমাইল হানিয়া ৩১জুলাই তেহরানে ইরানের রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সময় ইসরায়েলের হাতে খুন হন।
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের বর্তমান প্রধান তার বার্তায় আরো বলেন, এই তাজা রক্ত এবং শহীদদের বরকতময় কাফেলা নাৎসি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আমাদের শক্তি ও সংকল্প বাড়িয়ে তুলবে। একই সঙ্গে এই দখলদার বাহিনীকে ফিলিস্তিনি ভূমি থেকে বিতাড়িত করে নিশ্চিহ্ন করা হবে। “এবং সেই বিজয়ের মাধ্যমে, আমরা আল-কুদস (জেরুজালেম) এর রাজধানী হিসাবে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব,” ।
তিনি বলেন, ইসমাইল হানিয়ার শাহাদাত প্রমাণ করেছে আমাদের নেতা ও যোদ্ধাদের রক্ত সাধারণ ফিলিস্তিনি মানুষের রক্তের চেয়ে বেশি দামী নয়। এ সময় তিনি হানিয়ার নীতির প্রতি অঙ্গীকার করে বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জিহাদ ও প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই। আর এর ওপর নির্ভর করে আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণের ঐক্য এবং আমাদের আরব ও ইসলামি জাতিসত্তার ঐক্য। আমরা আমাদের মতভেদ ও বিভাজন প্রত্যাখ্যান করি। সিনওয়ার আরো উল্লেখ করেন যে, এই ধরনের সংহতি ইহুদিবাদী শত্রুর বিরুদ্ধে একটি ঐক্যফ্রন্ট গঠনে অবদান রাখবে। এ সময় তিনি ইহুদিবাদী বাহিনীকে “মুসলিম জাতির প্রকৃত শত্রু” এবং “ফিলিস্তিনি জাতির সম্পদ ও ক্ষমতা চুরি করার সম্প্রসারণবাদী উচ্চাভিলাষ দ্বারা চালিত সবচেয়ে বড় হুমকি” হিসেবে উল্লেখ করেন।
এদিকে, হামাস ঘোষণা করেছে যে তারা ফিলিস্তিন গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আলোচনায় ইসরায়েলের পক্ষ থেকে নতুন কোনো ‘দাবি বা শর্ত’ মেনে নেবে না। ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাসের প্রতিনিধি দলের প্রধান এবং সংগঠনটির পলিটব্যুরোর উপপ্রধান খলিল আল-হাইয়া সম্প্রতি এ ঘোষণা দেন। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার আলোচনায় মধ্যস্থতা করছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান এবং মিশরের গোয়েন্দামন্ত্রী আব্বাস কামেল।
হামাস নেতা হায়া বুধবার কাতারের রাজধানী দোহায় স্বাগতিক প্রধানমন্ত্রী ও মিশরের গোয়েন্দা মন্ত্রীকে তার সংগঠনের অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করেন। শুরু থেকেই, হামাস প্রতিনিধি দল অবিচল ছিল যে হামাস এমন একটি চুক্তি গ্রহণ করবে না যাতে সমগ্র গাজা উপত্যকা থেকে সমস্ত দখলদার বাহিনী প্রত্যাহারের অন্তর্ভুক্ত না থাকে।
খলিল আল-হাইয়া বলেন, যদি ইসরায়েলি জিম্মিদের জীবিত ফিরিয়ে নিতে হয়, তাহলে গাজা উপত্যকা থেকে সমস্ত সেনা প্রত্যাহার, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া, উপত্যকায় বিনামূল্যে সাহায্য প্রবেশ এবং সুষ্ঠু পুনর্গঠন করতে হবে। গাজাকে মেনে নিতে হবে। হামাস নেতা আরও বলেন, যুদ্ধের পর গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে তা সম্পূর্ণ ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে অন্য কারো মতামত চাপানো যাবে না।
গত জুলাইয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হামাসের এই শর্তের ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পেশ করলে হামাস তা মেনে নেয়। এরপর থেকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিভিন্ন নতুন শর্ত আরোপ করে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছেন। এদিকে, অবরুদ্ধ গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের চলমান হামলায় এ পর্যন্ত ৪১,১১৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন । আহত হয়েছেন আরও ৯৫ হাজার ১২৫ জন। এদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।