October 4, 2024
কুরআন তেলাওয়াতে শান্তি খুঁজজেন গাজার নারীরা

কুরআন তেলাওয়াতে শান্তি খুঁজজেন গাজার নারীরা

কুরআন তেলাওয়াতে শান্তি খুঁজজেন গাজার নারীরা

কুরআন তেলাওয়াতে শান্তি খুঁজজেন গাজার নারীরা

তাঁবুর মসজিদে কুরআন তেলাওয়াত করছেন মহিলারা। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপ এবং ক্রমাগত ইসরায়েলি দখলদারিত্বের আক্রমণের ভয়াবহতায় স্তব্ধ গাজার নারীরা এখন পবিত্র কোরআনের পবিত্র শব্দে সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছেন তাঁরা । বারবার হামলা, প্রিয়জনের মৃত্যু, বাস্তুচ্যুতি, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাদের জীবনকে অসহনীয় করে তোলে। এমতাবস্থায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়া নারীরা আত্মার শান্তি ও শক্তির মাধ্যম হিসেবে কুরআন মাজিদ তেলাওয়াত ও মুখস্ত করা বেছে নেযন ।

শাইমা আবুলত্তা (২০), গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রী, বা ইমান আসেম (৩৪), ইসলামিক আইনে স্নাতক, তাদের আর পড়াশোনা বা চাকরি করার স্বপ্ন নেই৷ বারবার হামলার কারণে তারা বাস্তুচ্যুত হওয়ায়  চাকুরীর উপর আর  নির্ভর করতে পারে না। তারা৫০-৬০ জন প্রিয়জনকে হারায়।  এখন  এবং তাদের জীবনের নিরাপত্তা খুঁজে পায় না।

এমন দুঃখজনক পরিস্থিতিতে শাইমা, আসেমের মতো অনেক মহিলা অবশেষে শিশুদের কুরআন  মাজিদ শেখানোর সিদ্ধান্ত নেন। তারা মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় একটি তাঁবুতে  মসজিদ স্থাপন করে এবং কুরআন মজিদ শিক্ষা দেওয়া শুরু করে।

যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও কোরআনের হাফেজ হলেন এই তিন নারী . শায়মা বলেন, গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি, খাবার, কিছু নেই। বিমান হামলা, বোমা হামলা এবং প্রিয়জনকে হারানো আমাদের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মধ্য গাজার বাস্তুচ্যুত মহিলারা এই তাঁবুর মসজিদে নিয়মিত মিলিত হন, তাদের একমাত্র সঙ্গী এখন কুরআন , ইসরায়েলি বোমা হামলার ধ্বংসাবশেষ এবং নর্দমায় প্লাবিত রাস্তা পার হওয়ার পরে কুরআন তাঁদের নিত্য দিনের সঙ্গী।

গত ৪ জুন এই তাঁবু মসজিদে পবিত্র কুরআন  মুখস্ত করে হাফেজ হন ছয় নারী। ঘটনাটি সবার মনে নতুন আশা জাগিয়েছে। তারপর থেকে আরও বেশি সংখ্যক মহিলা কুরআন তেলাওয়াত এবং মুখস্থ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

শাইমা বলেন ,”তারা যখন কুরআনের শেষ অংশ তিলাওয়াত করলো, তখন আমরা সবাই আনন্দে কেঁদে ফেললাম। প্রথমে অবিশ্বাস মনে হয়েছিল, এই কঠিন সময়ে কুরআন মুখস্ত করা অবশ্যই একটি স্মরণীয় বিষয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিবেশ, বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা নেই। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের কিছু নেই, কেবল আল-কুরআনই আমাদের শক্তি দেয়।”

প্রথমে অল্প পরিসরে কুরআন মজিদ শিক্ষা শুরু করা হলেও পরবর্তীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁবুসহ একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। মসজিদের নাম ‘প্রেয়ার হল অফ দ্য সার্কেল অফ দ্য গুড ওয়ার্ড।’ মসজিদের গেটে কুরআনের একটি আয়াত লেখা-

اَلَا بِذِكۡرِ اللّٰهِ تَطۡمَئِنُّ الۡقُلُوۡبُ

(‘নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণে অন্তর প্রশান্তি পায়।’)

সূরাঃ ১৩/ আর-রাদ, আয়াত-২৮

বর্তমানে 3 বছরের শিশু থেকে ৭০-৮০ বছর বয়সী মহিলারাও এই মসজিদে কুরআন শিখতে আসছেন। প্রায় শতাধিক মহিলা এখানে নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত ও মুখস্ত করেন।

মসজিদের সামনে লেখা কুরআনের আয়াত, আল্লাহর স্মরণে নিশ্চয়ই হৃদয় শান্তি পায়।

শাইমা বলেন, “যেকোনো মুহূর্তে আমরা মারা যেতে পারি। এই পরিস্থিতিতে আমরা শেষ কাজটি করতে চাই, কুরআন মুখস্থ করে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাথে দেখা করা।”

যারা তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন তারা বিশ্বাস করেন যে এই কুরআন তেলাওয়াত এবং মুখস্থ করার সওয়াব তাদের প্রিয়জনের কাছে চলে যাবে। ফলে তারা দিন দিন কুরআনের সাথে নিজেদেরকে আরও বেশি করে জড়িয়ে নিচ্ছেন।

শাইমা যোগ করেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা কুরআনের যত কাছে যাব এবং যত বেশি মুখস্থ করব, ততই আমরা যুদ্ধ ও দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে পারব – ইনশাআল্লাহ।’

আরও জানতে

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X