December 7, 2024
চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণের সমর্থকদের হামলায় আইনজীবী নিহত

চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণের সমর্থকদের হামলায় আইনজীবী নিহত

চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণের সমর্থকদের হামলায় আইনজীবী নিহত

চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণের সমর্থকদের হামলায় আইনজীবী নিহত

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে ইসকন সমর্থকদের হামলায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এনামুল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী ছিলেন।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) হুমায়ুন করির বলেন, আন্দোলনকারীদের হামলায় একজন আইনজীবী নিহত হয়েছেন বলে আমরা খবর পেয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সঙ্গে বিজিবির ছয় প্লাটুন মোতায়েন করা হয়েছে। এখন শান্ত।”

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কায়েস উদ্দিন দিদার বলেন, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম রঙ্গন কমিউনিটি সেন্টারের গলির মুখে ছিলেন। সেখান থেকে চিন্ময়ের সমর্থকরা তাকে ধরে কুপিয়ে হত্যা করে।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নুরুল মোস্তফা সোহেল বলেন, ‘মসজিদে হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান আলিফ। সেখান থেকে তাকে ধরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।’

এর আগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন মঞ্জুর না হওয়ায় আড়াই ঘণ্টা আদালত চত্বরে তাকে বহনকারী প্রিজন ভ্যান অবরোধ করে রাখে তার সমর্থকরা। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সমর্থকরা বিভিন্ন স্থাপনা ও আইনজীবীদের গাড়িতে হামলা শুরু করে।

ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর, ভক্তরা ইসকন সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালতের কেন্দ্রীয় মসজিদের জানালা ভাঙচুরের অভিযোগ তোলে। তারা আইনজীবীর পাঁচটি প্রাইভেটকার ও ১০টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। পরে নগরীর লালদীঘি ও কোতয়ালী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভক্তদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া করা হয়।

চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, পুলিশ রাস্তা পরিষ্কার করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে ইসকন কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন ভবন ও যানবাহনে হামলা শুরু করে। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২৬ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ছয়জন বর্তমানে চমেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৯ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, “পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় আন্দোলনকারীরা বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভাংচুর করে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না।”

হত্যার প্রতিবাদে অংশ নেওয়া চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী রেজাউল করিম বলেন, “ইসকনের অনুসারীরা ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাস আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে আদালত এলাকা থেকে ধরে পাশের রঙ্গম টাওয়ারে নিয়ে যায়। সেখানে বিকেল ৪টার দিকে তাকে ছুরিকাঘাত করে আহত করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় জড়িত চিন্ময় দাসের অনুসারীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। অন্যথায় চট্টগ্রামের আইনজীবীরা লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।’

সন্ধ্যায় মরদেহ দেখতে আসেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির শাহজাহান চৌধুরী। এ সময় তিনি সাইফুল ইসলামের আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং স্বজন ও সহকর্মীদের ধৈর্য ধরতে বলেন। শাহজাহান চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টায় চিন্ময় কৃষ্ণকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার অনুসারীরা আদালত প্রাঙ্গণে তাকে বহনকারী প্রিজন ভ্যান অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। প্রিজন ভ্যানের সামনে মাটিতে শুয়ে পড়েন অনেকে। পরে তারা আদালত এলাকায় ভাঙচুর শুরু করে। আইনজীবীদের কক্ষও ভাঙচুর করা হয়। আড়াই ঘণ্টা পর দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ ও বিজিবি লাঠিচার্জ শুরু করে। পরপর বেশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। এতে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এসময় পুলিশ তাদের প্রিজন ভ্যানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ভ্যানের চাকা উল্টে যায়। পরে পুলিশের গাড়িতে চিন্ময় কৃষ্ণকে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

আইনজীবী সাইফুলের খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে: হাসনাত

চট্টগ্রামের আদালত পাড়ায় সংঘর্ষে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামের খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। একই সঙ্গে তিনি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি সারাদেশের সাধারণ জনগণকে শান্ত থাকার অনুরোধ করছি। ধৈর্য ধরুন, শান্ত থাকুন। দয়া করে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করবেন না। আমাদের বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ। আমাদের এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমরা কোনোভাবেই বিনষ্ট হতে দেব না।

তিনি বলেন , ৫ আগস্ট থেকে একটি মহল আমাদের দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করে চলেছে। দয়া করে নিজেরা নিজেরা কোন্দলে জড়িয়ে কুচক্রী এই মহলের হীন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পথ তৈরি করে দিয়েন না।

আরো পড়তে

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X