November 23, 2024
ত্রুটিতে পরিপূর্ণ বাংলাদেশ বিমান:সতর্ক থাকুন উড়তে

ত্রুটিতে পরিপূর্ণ বাংলাদেশ বিমান:সতর্ক থাকুন উড়তে

ত্রুটিতে পরিপূর্ণ বাংলাদেশ বিমান:সতর্ক থাকুন উড়তে

ত্রুটিতে পরিপূর্ণ বাংলাদেশ বিমান:সতর্ক থাকুন উড়তে

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজগুলো একের পর এক ত্রুটি খুঁজে পাচ্ছে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এটা বিমান কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে ৫টি ড্যাস-৮ উড়োজাহাজ নিয়ে সমস্যায় পড়েছে বিমান। তাদের প্রায়ই ত্রুটি থাকে। গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি উড়োজাহাজে ত্রুটি দেখা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে ঢাকায় যাওয়ার সময় জ্বালানি ট্যাঙ্ক লিকেজের কারণে ঝুঁকি নিয়ে একটি ইঞ্জিন চালিয়ে ডিএএস-৮ বিমানটিকে শাহজালালে অবতরণ করতে সক্ষম হন ক্যাপ্টেন মইন। বিমান ও এর যাত্রীরা বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায়। বর্তমানে এই DAS-৮ বিমানটি গ্রাউন্ডেড। এর আগে, বৃহস্পতিবার আরেকটি ডিএএস-৮ বিমানে কক্সসওয়াইন ত্রুটি দেখা দেয়। ঢাকায় এনে ঠিক করে আবার চালু করা হয়। এছাড়া গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে ওমানের মাস্কাট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর বোয়িং বিমানের জ্বালানি ট্যাঙ্কে সমস্যা ধরা পড়ে বলে জানা গেছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে বিমানে বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে। গত সোমবার চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের ফ্লাইট BG-127 আবুধাবির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। উড্ডয়নের পর এর উইন্ডশিল্ড ফেটে যায়। এ সময় পাইলট আবুধাবিতে না গিয়ে জরুরি অবতরণ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু অবতরণের আগে জ্বালানি কমাতে ফ্লাইটটি ৩ ঘণ্টা নরসিংদীর আকাশে  প্রদক্ষিণ করে। গত ২৫ জুন মঙ্গলবার একটি ড্যাস-৮কিউ-৪০০ রেজিস্ট্রেশন নম্বর এস২-একেই ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা ফ্লাইট পরিচালনা করার পর পরবর্তী ফ্লাইটে কক্সবাজারে উড্ডয়নের সময় ক্যাপ্টেন আজব উড়োজাহাজের নোস গিয়ারে ত্রুটি দেখতে পান। তখন এটি বাদ দিয়ে ২ ঘণ্টা বিলম্বে ড্যাস-৮কিউ-৪০০ রেজিস্ট্রেশন নম্বর এস২-এজিআর দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। পরে সন্ধ্যায় মেরামত করে ড্যাস-৮ এস২-একেই কক্সবাজারে ফ্লাইট পরিচালনা করার পর আবারও একই ত্রুটির সম্মুখীন হয়। পরে বুধবার নোস গিয়ার মেরামত করে বিমানটি ঢাকায় ফিরে আসে। গত বৃহস্পতিবার কোলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরার সময় DAS-8 Reg S-2 AGR উড়োজাহাজটি তেল লিক এবং প্রেসার ড্রপের শিকার হয়, যার ফলে দ্বিতীয় ইঞ্জিনটি ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় পাইলট ঝুঁকি নিয়ে প্রথম ইঞ্জিন চালিয়ে শাহজালালে অবতরণ করতে সক্ষম হন।

গত বুধবার বিকেলে বিমানের ফ্লাইট বিজি -১২৫ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কাতারের দোহায় যাওয়ার সময় পাইলট বিমানের মাঝখানে দুটি দরজা খুলা (লক করা হয়নি) দেখতে পান। বিমানটি অবিলম্বে তার উড্ডয়নের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এবং যাত্রী নিয়ে ফিরে আসে। ভুল সংশোধন করে গন্তব্যে রওনা দেয় । তবে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিমানের যাত্রীরা। এছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজটি যাত্রী নিয়ে গত বুধবার মাস্কাটে অবতরণ করে। বৃহস্পতিবার ফেরার আগে তেলের ট্যাঙ্কের তিনটি স্ক্রু ঢিলেঢালা অবস্থায় পাওয়া গেছে। এরপর ফ্লাইটটি বাতিল করে অবতরণ করা হয়। পরে প্রকৌশলী সাফির সালেহ ঢাকা থেকে স্ক্রু নিয়ে গেলে তা ঠিক করা হয়।

বিমানের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কানাডার বোম্বার্ডিয়ার কোম্পানির তৈরি ড্যাস-৮ মডেলের উড়োজাহাজের ভাগ্য এদেশে খুব একটা ভালো নয়। বিশ্বব্যাপী ছোট বিমান হিসেবে ড্যাস-৮  এর সুনাম থাকলেও বাংলাদেশে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয় এই মডেলের বিমান। সেটা জাতীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমান হোক বা অন্য কোনো বেসরকারি বিমান সংস্থা। কখনো বাতাসে এর চাকা বন্ধ হয়ে যায়, কখনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়, আবার বিধ্বস্ত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৯ সালে, বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলার যে বিমানটি নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়েছিল সেটি ছিল এই ড্যাস-৮  মডেলের। ওই দুর্ঘটনায় ৭১ জন যাত্রীর মধ্যে ৫১ জন নিহত হন, যার মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি ছিলেন। এছাড়াও DAS বিমানের অতীত রেকর্ড খুবই খারাপ। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এটি বারবার অবতরণ করছে।

২০১৫ সালে,২ টি ড্যাস-৮  মিশরের স্মার্ট এভিয়েশন থেকে ড্রাই লিজের ভিত্তিতে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। S2-AGR বিমানটি ২০২০ সালে চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পরে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল এবং এর নাম পরিবর্তন করে হান্স জেমিনি রাখা হয়েছিল। এর আসন সংখ্যা ৭৪ টি । আরেকটি S-2 AGQ মিয়ানমারে 8 মে, 2019-এ বিধ্বস্ত হয়। প্রায়শই ড্যাস-৮  বিমান ত্রুটিপূর্ণ, মেরামত এবং অপারেশনে ফিরে আসে। বেশিরভাগ সময় ত্রুটির কারণে ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। এতে বিমান সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। একের পর এক ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি পাওয়ায় এসব ফ্লাইটে যাতায়াতকারী দেশি-বিদেশি যাত্রীরা চিন্তিত।

বিমান বলছে তার ২১টি বিমানের মধ্যে ৫টিতেই ড্যাস-৮  আছে। এছাড়াও, ৭৩৭-এ 6টি, ৭৮৭-৯-এর 2টি, ৭৮৭-৮-এ 4টি এবং ৭৭৭-৩০০ ER-এর রয়েছে ৪টি। ড্যাস-৮  অভ্যন্তরীণ রুট (স্বল্প দূরত্বের) ফ্লাইট পরিচালনা করে। আগের তুলনায় যাত্রী বেড়েছে, ফ্লাইটও বেড়েছে। প্রতিদিন ১২টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়। এতে বিমানের ওপর চাপ বেড়েছে। এ ছাড়া অধিনায়ক সংকটেও ভুগছে বিমান ।

এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের বয়স অনেক, তাই কর্মক্ষমতা কমে গেছে। প্রায়শই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তারা ভেঙে যায়। ফ্লাইটের সময়সূচী এলোমেলো হয়ে যায়। বারবার মেরামত করতে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। বাংলাদেশ বিমানের বহরে থাকা অনেক ও-ড্যাস-৮ তে চড়তে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ করে না। অবতরণের সময় প্রচুর ঝাঁকুনি ও ধাক্কা লাগে।

Read more…

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X