December 11, 2024
খেজুর দিয়ে ইফতার বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য

খেজুর দিয়ে ইফতার বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য

খেজুর দিয়ে ইফতার বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য

খেজুর দিয়ে ইফতার বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য

খেজুর দিয়ে ইফতার বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য ইফতার করা মহানবী সাঃ এর একটি বিশেষ সুন্নাত বা পছন্দনীয় কাজ।   তাই অবশ্যই তার মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক এবং বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য রয়েছে।  আমরাএ বিষয়ে আলোচনা করছি।

খেজুরের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় তাৎপর্য

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় থেকেই খেজুর দিয়ে ইফতার করা হয়ে আসছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) খেজুর ও পানি খেয়ে রোজা ভাঙতেন (ইফতার করতেন )। মিষ্টি, ফল, বিশেষ করে খেজুর দিয়ে রোজা ভঙ্গ করা (ইফতার করা) সুন্নত; যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে যে কোনো হালাল খাবার, এমনকি শুধু পানি দিয়েও ইফতার করা যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রোজা রাখে, সে যেন খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙ্গে, না খেজুর দিয়ে, পানি দিয়ে। নিশ্চয় পানি বিশুদ্ধ।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ)

তাই রমজানে আমাদের ইফতারের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হল খেজুর । খেজুর দিয়ে রোজা ভঙ্গ করা একটি রমজানের ঐতিহ্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সারাদিন রোজা রাখার পর এমন কিছু খাওয়া উচিত যা শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়। আর খেজুরকে বলা হয় প্রাকৃতিক  শক্তির অন্যতম  উৎস। খেজুরের আরও অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম, সালফার, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফলিক অ্যাসিড, প্রোটিন এবং ভিটামিন রয়েছে।

রোজা রাখলে শরীরে আঁশের প্রয়োজন হয়। খেজুর শরীরে এই পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে। এছাড়াও সারাদিন না খেয়ে কাজ করে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই খেজুরে থাকা ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন শরীরকে সচল রাখতে খুবই কার্যকরী।

খেজুর একটি সুস্বাদু ও সুপরিচিত ফল। রোজার মাসে ইফতারে প্রায় সবাই খেজুর রাখেন। তাই শুধু রমজান মাসেই নয়, সারা বছরই খাদ্যতালিকায় খেজুর রাখা যেতে পারে।

আমরা যদি এটিকে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারি তবে শুধু আমাদের প্রতিদিনের কাজের ক্লান্তিই দূর হবে না, আমরা সুস্থ থাকার উপায়ও খুঁজে পাব। চলুন জেনে নেই খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে:

  • খেজুর স্বাদ বাড়ায়।
  • ত্বক সুস্থ রাখে।
  • দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • খেজুরে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকায় এই ঘাটতি পূরণ হয়।
  • খেজুর রক্ত উৎপাদনকারী।
  • হৃদরোগীদের জন্যও খেজুর খুবই উপকারী।
  • খেজুর পুষ্টিগুণে ভরপুর।
  • ফুসফুসকে রক্ষা করার পাশাপাশি মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
  • খেজুরে রয়েছে ডায়েটারি ফাইবার যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
  • তাজা খেজুর নরম ও মাংসল যা সহজে হজম হয়।
  • উচ্চ চিনি, ক্যালরি এবং চর্বিযুক্ত খেজুর জ্বর, মূত্রনালীর সংক্রমণ, গলা ব্যথা বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে খুবই কার্যকর।
  • খেজুর মস্তিষ্ককে সজীব রাখে।
  • খেজুর ক্লান্ত শরীরে যথেষ্ট শক্তি জোগায়।
  • যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য খেজুর খুবই উপকারী।
  • খেজুর হৃদরোগ, জ্বর ও পেট ব্যথায় উপকারী এবং টনিক হিসেবে কাজ করে।

খেজুর পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। রোজার মাসে শুধু ইফতারেই নয়, সেহরিতেও খেজুর রাখতে পারেন।

খেজুর ক্লান্ত শরীরে যথেষ্ট শক্তি জোগাতে পারে। তাই সারাদিন রোজা রেখে খেজুর খেলে শরীরে শক্তি পাবেন। এ ছাড়া নিয়মিত খেজুর খেলে সারাদিনের কাজের ক্লান্তি দূর হয়।

সারাদিন রোজা রাখলে শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায় এবং তীব্র ক্ষুধা লাগে। ইফতারের পর খেজুর খেলে শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ হয়। শুরুতে দুই বা তিনটি খেজুর খেলে ক্ষুধার তীব্রতা কমে যায়।

  • খেজুর ভিটামিন বি সমৃদ্ধ। ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
  • খেজুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা শরীরকে ডিটক্সিফাই করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত খেজুর খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো হয়। খেজুরের লুটেইন এবং জেক্সানথিন চোখের রেটিনাকে রক্ষা করে।
  • খেজুর ফাইবার সমৃদ্ধ। এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে পারে। নিয়মিত খেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ভালো হয়।
  • খেজুর দৈনিক আয়রনের চাহিদার প্রায় ১১শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম। আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় খেজুর শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের খাবারে খেজুর রাখতে পারেন।
  • খেজুরে প্রায় ২০-২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • খেজুর ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। ক্যালসিয়াম হাড় গঠন এবং হাড় ক্ষয় প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • খেজুর হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে উপকারী।
  • নিয়মিত খেজুর খেলে অনেক জটিল রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
  • খেজুরের বিভিন্ন উপাদান শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

খেজুর একটি প্রাকৃতিক মিষ্টি ফল। তাই চিনির বিকল্প হিসেবে খেজুর ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবারে চিনির পরিবর্তে খেজুর যোগ করা যেতে পারে।

খেজুর অন্যান্য ফলের চেয়ে বেশি পুষ্টিকর। এ কারণেই বলা হয়ে থাকে যে, বছরে যতগুলো দিন আছে তার চেয়ে খেজুরের গুণ বেশি। শুধু রমজান মাসের জন্যই নয়, সারা বছরই পুরো পরিবারের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি এই ফলটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X