৭ ফুট লম্বা ছড়িতে প্রায় ২ হাজার কলা: সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমা
কলাঃ
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে কলা অন্যতম। কলা সাধারণত উষ্ণ জলবায়ু-সম্পন্ন দেশগুলিতে ভাল জন্মে। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে কলার উৎপত্তিস্থল হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই কলা অন্যতম প্রধান ফল। শত শত বছর ধরে বাংলাদেশের নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোর, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর প্রভৃতি এলাকায় ব্যাপকভাবে কলার চাষ হয়ে আসছে।
গাছের বর্ণনাঃ
উদ্ভিদবিদ ইতিহাসবেত্তাদের মতে, ভারত ও চীন কলার জন্মস্থান। কিন্তু আরেক অনেক উদ্ভিদবিদ পাক-ভারত ও মালয়কে কলার উৎপত্তি বলে মনে করেন। কলাগাছ একটি বীরুৎ শ্রেণির উদ্ভিদ। আবার এটি একবীজপত্রী উদ্ভিদ। বেশিরভাগ প্রজাতির গাছ বহুবর্ষজীবী। উদ্ভিদটি মাটির নীচে একটি রাইজোম বা কন্দ এবং মাটির উপরে একটি সিউডোস্টেম বা ছদ্মরূপ নিয়ে গঠিত। কান্ড এবং পাতা উভয়ই সবুজ।
বাংলাদেশে কলা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সারা বছরই দেশের প্রায় সব অঞ্চলের উঁচু জমিতে কলা চাষ করা যায়। সাগর কলা , সরবি কলা , চিনি চাম্পা কলা , বনকলা, বাংলাকালা, মামা কলাসহ বিভিন্ন ধরনের বন্য কলা পাহাড়ি এলাকায় চাষ করা হয়। কলা লাতিন আমেরিকার দেশ যেমন কলম্বিয়ার একটি প্রধান অর্থকরী ফসল। প্রাচীন ভারতীয় অর্থনীতিতে কলা চাষও একটি প্রধান অর্থকরী ফসল।
এবার আসি সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় নেয়ামতপূর্ণ একটি বিশেষ কলার ছড়া নিয়ে।
এক ছড়িতে প্রায় দুই হাজার কলা ধরা পড়ে। সম্প্রতি গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানার লতিফপুর এলাকার মনপুরা বিনোদন পার্কে
এক কাঠিতে প্রায় দুই হাজার কলা ধরা পড়ে।
কলাগাছের মাথা থেকে বেরিয়ে আসা ছড়িটি নামার সময় প্রায় মাটি ছুঁয়ে যায়। সাত ফুট লম্বা ছড়িটির ওজনে গাছ যাতে হেলে না পড়ে সেজন্য দুই পাশে বাঁশ দেওয়া হয়েছে। প্রায় দুই হাজার কলা ছড়িতে ধরে।
ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানার লতিফপুর এলাকার মনপুরা নামের একটি বিনোদন পার্কে এমনই একটি কলাগাছ দেখা গেছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এ কলাগাছ দেখতে প্রতিদিনই সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন উতসুক মানুষ।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, দুই বছর আগে মনপুরা পার্কে এক দর্শনার্থী এসে উপহার হিসেবে একটি কলা গাছ দিয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ পার্কের ভেতরে তা লাগিয়েছে। ধীরে ধীরে সেই চারা বড় হয়ে কলা ধরে। পরে সেখান থেকে একটি নতুন কলা গাছের জন্ম হয়। যেখানে ছয় মাস আগে কলার ছড়ি বের হয়। ছড়িও বাড়তে থাকে। কলা ছড়ি প্রায় ৭ ফুট লম্বা হয় এবং মাটি স্পর্শ করে।
কলার ছড়ির ওজনে গাছ যাতে না পড়ে সেজন্য বাঁশের খুঁটি দেওয়া হয় এবং সোজা রাখা হয়।
কোনাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মারুফ হোসেন গত শুক্রবার বিকেলে মনপুরা পার্কে বেড়াতে যান। বললেন, ‘কলার ছড়ি আমার চেয়ে লম্বা। এত লম্বা কলার ছড়ি আগে কখনো দেখিনি। কিন্তু এই কলা ভোজ্য কি না তা জানা যায়নি।যা পাকলে খেলেই কেবল বুঝা যাবে, তবে আশা করা যাচ্ছে কলার পুরোপুরি স্বাদই সেখানে থাকবে।
মনপুরা পার্কের ম্যানেজার জায়েদ হাসান বলেন, “পার্কে কলার চারা লাগানোর পর কোনো পরিচর্যা করা হয়নি। এম্নেতেই বড় হয়েছে। গাছে কলাও ধরেছে। এই প্রথম গাছের কলার ছড়ি এত বড় হয়েছে। এখন ছড়ি উঠলেই কলা গাছের যত্ন নেওয়া হয়। কলার লাঠির ওজনে গাছ যাতে ভেঙ্গে না যায় সে জন্য দুটি বাঁশের খুঁটি বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
জায়েদ হাসান আরো জানান, এটি হাজারিকা জাতের কলাগাছ। তারা এই গাছের কলা খেয়েছে। খেতে একটু টক হলেও স্বাদ । কলার কাঠি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন পার্কে।
কাশিমপুর সুরাবাড়ী এলাকার রুহুল আমিন দেওয়ান জানান, লম্বা কলার কাঠির কথা শুনে তিনি গাছ দেখতে যান। ওপরের কলাগুলো একটু বড়। কয়েকটা কলা পেকে গেছে। আর নিচের কলাগুলো খুবই ছোট।
গাজীপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসিবুল হাসান বলেন, অসাধারণ এই কলার কাঠির কথা শুনে তারা পার্কে যান তারা । কাঠিতে প্রায় ২০০০ কলা আছে। উপরের কলাগুলি ভোজ্য তবে নীচের কলাগুলির বিষয়ে এখনো তারা অবগত নন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এখান থেকে নতুন জাত উদ্ভাবন সম্ভব কিনা সে বিষয়ে গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
যে স্রষ্টা আদমসহ হাজার হাজার মাখলুককে বা সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন। তার খাবারের ব্যবস্থা করেছেন, করেছেন তার রিজিকের ব্যবস্থা । এবং তার ভালো মন্দ সবই তিনিই দেখভাল করেন । তার অপার মহিমায় অনেক কিছুই ঘটেছে। তার মধ্যে এটাও একটা আশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী ।