ডলার এনডোর্সমেন্টে বা ডলার অনুমোদনে অনীহা দেখাচ্ছে অনেক ব্যাংক
রিজার্ভ কমে যাওয়া থেকে ডলার সংকট, ডলার সংকট থেকেই বিভিন্ন ব্যাংক বাইরে ভ্রমণ করতে যাওয়া বা বাইরের দেশে কোন কাজে যাওয়ার জন্য ডলার ইনডোর্সমেন্ট দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে।
বছর শেষে অনেকেই বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন। ওমরাহ করতে যাওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে। দাম বাড়ায় অনেকেই নগদ ডলার কিনে ঘরে রেখেছেন। ফলে নগদ ডলারের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি। এ অবস্থায় বিদেশে যেতে পাসপোর্টে ডলার এনডোর্সমেন্টে অনীহা দেখায় অনেক ব্যাংক। কিছু ব্যাংক নিরুৎসাহিত করতে ৩ শতাংশ পর্যন্ত সার্ভিস চার্জ নিচ্ছে। এর পরও ব্যাংকে তদবির ছাড়া ডলার পায় না। এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে যাওয়ার পরিবর্তে আপনাকে খোলা বাজার থেকে বেশি হারে ডলার কিনতে হবে। মানি চেঞ্জারগুলোতেও অনেক সময় মিলছে না ডলার। পাওয়া গেলেও দাম অনেক বেশি।
ব্যাংকাররা জানান, তাদের বেশির ভাগই দেশের বাইরে গিয়ে এনডোর্সমেন্টের জন্য ব্যাংকে আসেন। আর বিদেশ থেকে ফিরে এসে বেশি দাম পাওয়ার আশায় খোলা বাজারে বা মানি চেঞ্জারে বিক্রি করে। কেউ কেউ বিদেশে যাওয়ার সময় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার কেনেন, ফেরার সময় বেশি দামে বিক্রি করার আশায়। ব্যাংকগুলোতে নগদ ডলারের ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি অনেক জোরদার করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো এখন ডলার এনডোর্সমেন্টের ব্যাপারে খুবই সতর্ক। গ্রাহকদের বলা হচ্ছে কোনো ডলার নেই বা তাদের নিরুৎসাহিত করতে আগের চেয়ে বেশি চার্জ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আসন্ন নির্বাচনসহ নানা কারণে অনেকেই নগদ ডলার কিনে বাড়িতে রেখেছেন। আটকে থাকা ডলার ব্যাংকে ফেরত দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশ ভ্রমণ শেষে দেশে ফেরার পর বৈদেশিক মুদ্রায় খোলা আরএফসিডি হিসেবে ডলার রাখা হলে ৭ শতাংশের বেশি সুদ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদেশ ভ্রমণের সময় একজন ব্যক্তি যতই কম ডলার নেয় না কেন, দেশে ফিরে RFCD হিসাবে $১০,০০০ জমা করার মাধ্যমে তিনি এই সুদ পাবেন। আবার, প্রবাসী বাংলাদেশি সুবিধাভোগীরাও বৈদেশিক মুদ্রায় অ্যাকাউন্ট খুলে ডলার জমা করলে একই সুদ পাবেন।
এব্যাপারে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ডিসেম্বরে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অনেকেই দেশের বাইরে বেড়াতে গেছেন। এখন অনেকেই ওমরাহ করতে যাচ্ছেন। এতে নগদ ডলারের চাহিদা বেড়েছে। তবে বড় কোনো সংকটের কথা তিনি শোনেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোতে এখন প্রায় ২৮ মিলিয়ন ডলার নগদ মজুদ রয়েছে। কয়েক মাস ধরে নগদ ডলারের পরিমাণ এমনই রয়েছে। এর আগে অনেক সময় ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ ডলারের পরিমাণ ছিল তিন কোটি টাকার বেশি। তবে চরম সংকটের কারণে গত বছর ব্যাংকের সঙ্গে ভারসাম্য এক মিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, খোলা বাজারে ডলার এখন বিক্রি হয়েছে ১২২ থেকে ১২৩ টাকায়। বেশ কিছুদিন ধরে একই দামে বিক্রি হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে মানি চেঞ্জাররা ক্রয়মূল্য ১১৩ টাকা এবং বিক্রয়মূল্য ১১৪ টাকা ৫০ পয়সা ঘোষণা করছে। তবে ঘোষিত হারে ডলার পাওয়া কঠিন। আর ব্যাংকগুলো ডলার ক্রয়-বিক্রয় করছে ১১৩ টাকা ও ১১৪ টাকায়। যাইহোক, তবে বেসরকারি খাতের বেশির ভাগ ব্যাংক এনডোর্সমেন্টের জন্য ৩ শতাংশ সার্ভিস চার্জ এবং তার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট কাটে। এতে করে ডলারের দর পড়ে যায় ১১৭ টাকার ওপরে উথেচ উঠেছে।
মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি একেএম ইসমাইল হক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই ডলারের দর স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে, বিশেষ করে আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় ধাপ পাওয়ার পর। এখন ঘোষিত দামে দেড় টাকা যোগ করে ১১৩ টাকায় কেনাবেচা করা যাবে।
বর্তমানে, ডলারের বিনিময় হার ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিদেশী মুদ্রায় লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর অ্যাসোসিয়েশন বাফেডা এবং ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি। সংকটের মধ্যে গত তিন দফায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে প্রতি ডলার ১ টাকা কমে হয়েছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা এবং আমদানিতে ১১০ টাকা। যদিও অনেক ব্যাংক ফরেন এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ডলার কিনছে ১২০ থেকে ১২২ টাকা দরে। আমদানির জন্য ১২৫ টাকা পর্যন্ত দর নিচ্ছে। এর মানে ঘোষিত বিড অবৈধ। কিন্তু এছাড়া বাজারে নতুন কোনো অস্থিরতা নেই।
নির্বাচনের পর ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে নতুন ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এই আশ্বাস তাদের। যেখানে বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি হার ঘোষণা করে সর্বোচ্চ শতাংশের ওঠানামা নির্ধারণ করা হবে। আইএমএফের পরামর্শে নতুন ব্যবস্থা চালুর কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে পুরোপুরি বাজারের কাছে ছেড়ে দেওয়া হবে না।