ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বাদিপক্ষ কোনো অভিযোগই উত্থাপন করতে পারেনি: আইনজীবী
নোবেল পুরস্কার, সম্মানিত ব্যক্তি, জ্ঞানী ব্যক্তি, আদালত,একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী সরকার , অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষা এগুলি কোন দিকে পরিচালিত হচ্ছে? সেগুলো বিবেক দ্বারা পর্যবেক্ষণ করে এবং আবেগ দ্বারা তাড়িত না হয়ে সৎ পথে পরিচালিত হওয়া উচিত। অন্যথায় এ কর্মধারা কখনোই বদ্বীপ থেকে বিলুপ্ত হবে না। এবং প্রতিহিংসার রাজনীতি চলতেই থাকবে । সৃষ্টিকর্তা বুঝার তৌফিক দান করুন ।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের পক্ষে ষষ্ঠ দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।
মঙ্গলবার ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা আদালতের বিচারক ড. ইউনূসের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। এদিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করা হয়েছে।
মঙ্গলবার শুনানি শেষে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন ২৮ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির জন্য আবেদন করেন। তবে আদালত পরবর্তী যুক্তিতর্কের জন্য ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।
এর আগে ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুনকে আরও কত ঘণ্টা শুনানির জন্য জানতে চান আদালত । এরপর ব্যারিস্টার মামুন বলেন, এই মামলায় আমরা, এই মামলায় আমরা ২০টি লিগ্যাল সাবমিশন রাখব। এজন্য অন্তত তিন দিন সময় লাগবে।
এ সময় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আপনি যেভাবে যুক্তি উপস্থাপন করছেন, শ্রম আদালতে তা রেকর্ড করবেন। তখন ব্যারিস্টার মামুন বলেন, আপনি এখানে বিশ্বের অন্যতম সেরা মানুষের বিচার করছেন। এটাও একটা রেকর্ড।
এ সময় আদালত বলেন, আপনারা দুই পক্ষ যা করছেন, শ্রম আদালতে তা কখনো হয়নি।
শুনানির বিষয়ে ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এখানে বাদীর বক্তব্য, তা একটার সাথে অপরটির কন্টারডিকশনস। তারা তাদের আর্জি ১৭ পাতা। আর তাদের কন্টারডিকশনস হলো প্রায় ১০০ পাতা। কোথাও তারা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তুলতে পারেননি। কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। তাই তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।
এর আগে গত ৬ ডিসেম্বর এ মামলায় ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোহাম্মদ ইউনূসকে শ্রম আদালতে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন ড. ওই দিন ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস সপ্তমবারের মতো শ্রম আদালতে হাজির হন।
ইউনূসের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন আদালতে ড. ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট এসএম মিজানুর রহমান।
অপরদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী।
এর আগে ১৬ নভেম্বর ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা বাদীর পক্ষে শুনানি করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। এরপর গত ২০ নভেম্বর ইউনূসের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন ড.
গত ৬ নভেম্বর এ মামলায় বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ওইদিন ৯ নভেম্বর আদালতে আসামি করেন। মোহাম্মদ ইউনূসসহ এ মামলার চার আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনে জবানবন্দি দেন।
গত ২রা নভেম্বর আদালতে চতুর্থ সাক্ষী মো.মিজানুর রহমান সাক্ষ্য দেন। এরপর গত ৬ নভেম্বর তাকে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে গত ২৬ অক্টোবর তৃতীয় সাক্ষী এবং ১৮ অক্টোবর এ মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী হাদিউজ্জামানের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। গত ১১ অক্টোবর বাদী শ্রম পরিদর্শক তরিকুল ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক ড. আরিফুজ্জামান। ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলায় শ্রম আইনের ৭, ৮, ১১৭ও ২৩৪ ধারায় শ্রম কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা এবং সরকারি ছুটির দিন নগদীকরণ না করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ঘটনায় ড. ইউনূস ছাড়াও আসামি করা হয়েছে গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূরজাহান বেগম ও শাহজাহানকে।
নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে, বিচার চান । নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনুস
ড. ইউনুস বলেন, “আমরা নির্দোষ। আমরা আদালতের কাছে বিচার চাই।” আত্মপক্ষ সমর্থন শেষে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ব্যক্তিগত লাভের জন্য কিছু করেননি। তিনি বলেন, “মানুষ প্রতিষ্ঠান করে মুনাফা করবে, বড় করবে। আমরাও লাভ করেছি, বড় হয়েছি।”
ডক্টর ইউনূস বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য যাকে আমরা বলি সামাজিক ব্যবসা, ব্যবসার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ। যে বিনিয়োগ করবে সে কোনো লাভ করবে না।
আদালতের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মানুষ কীসের জন্য আদালতে আসে? বিচার আদালতে আসে ন্যায়ের জন্য। আমিও ন্যায় বিচার চাই।