November 23, 2024
আশুরার তাৎপর্য ফজিলত এবং করণীয়

আশুরার তাৎপর্য ফজিলত এবং করণীয়

আশুরার তাৎপর্য ফজিলত এবং করণীয়

আশুরার তাৎপর্য ফজিলত এবং করণীয়

যদিও আশুরার তাৎপর্য ফজিলত এবং করণীয় সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে যাওয়ার বহু বছর পরে হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে কেন্দ্র করে বহমান ফোরাত নদীর প্রান্তরে কারবালার ময়দানে একই দিনে পৃথিবীর ইতিহাসে এবং ইসলামের ইতিহাসে পাষাণ ইয়াজিদের বাহিনী কর্তৃক   কঠোর   ও অমানবিক হৃদয়বিদারক ঘটনার সূচনা হয়েছে । দাওয়াত দ্বীনি দাওয়াত দিয়ে নিয়ে নবী (স.)পরিবারের ৭২  জন পিপাসার্ত  মানুষকে  পানি বন্ধ করে দিয়ে মেহমানদারী করেছে লম্পট ইয়াজিদ বাহিনী। আর মহানবীর কলিজার টুকরা বেহেস্তের যুবকদের সরদার সাইয়েদেনা হুসাইন (র.)  সহ অনেককে সেখানে কঠিনভাবে পিপাসার্ত রেখে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছে। সেই কঠিন দিবসটিও আশুরার দিনে পড়েছে ।এজন্য তাবৎ দুনিয়ার অনেক মানুষ আজও সেই শোকে  শোকাহত।

একটি সময় ছিল যখন মহরম মাসের ১ তারিখ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত কোন চোর চুরি করতোনা, কোন ডাকাত  ডাকাতি করতোনা,  কোন অমানুষ অমানুষি করতোনা।কারবালার সেই ঘটনাকে হৃদয়ে গেঁথে রেখে পৃথিবী এই  দশ দিন বিভিন্ন রকম পাপাচার থেকে অনেকটা মুক্ত থাকত।  কিন্তু ইতিহাসের যোগ বিয়োগে অনেক কিছু আজ হারিয়ে গিয়েছে । সে কারবালার শহীদদের প্রতি আমাদের অন্তরের অন্তস্থল থেকে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।  এবং যেন বেহেস্তে সে শহীদদের সাথে আমাদের স্থানটিও দয়াল আল্লাহ রেখে দেন সে আশা করছি ।

মহররম মাস হিজরি সনের প্রথম মাস। এটি কুরআনে বর্ণিত চারটি মহৎ মাসের একটি। এই চার মাসে যুদ্ধসহ সকল প্রকার অন্যায় কাজ কুরআনে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ:

নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা আল্লাহর কিতাবে ১২ টি, যেদিন থেকে তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত ধর্ম। সুতরাং এ মাসগুলোতে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না’ (সূরা তাওবা-৩৬) ।

বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.) বলেছেন, সময় নিজ নিজ আবর্তে আবর্তিত হয়। যেদিন থেকে আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। একটি বছর বারো মাস। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিন মাস  ক্রমান্বয়ে   আসে। যেমনঃ জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং এরপর  রজব (বুখারী)। আশুরা বা ১০ মহরমের মর্যাদা ও তাৎপর্য কুরআন ও হাদিস দ্বারাও স্বীকৃত।

বর্তমান মুসলিম সমাজে শিয়া সম্প্রদায়ের শিরক ও বিদয়াত কর্মকান্ডের কারণে অনেকেই শুধু কারবালার মর্মান্তিক ইতিহাসকেই মহররম ও আশুরা বলে বুঝে থাকেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, মহররম ও আশুরার মর্যাদা, ফজিলত ও আমল কারবালার ঘটনার অনেক আগে থেকেই কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।

মহররমের দশম দিনকে আশুরা বলা হয়। ইসলামে এই দিনটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এই দিনে ইসলামের বহু ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল।

আরও পড়তে পারেন

আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক প্রভাবশালী মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে হায়সাম

আল কুরআনের আলোঃ সংখ্যাতত্ত্বের চমৎকারিত্বে সাজানো বিস্ময়কর আল কুরআন

আশুরার মর্যাদা ও ঐতিহ্য ইসলাম-পূর্ব যুগ থেকেই স্বীকৃত। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) হিজরত করে মদিনায় এলেন এবং তিনি মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখলেন। তাদের এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, এটা সেই দিন, যে দিন আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাঈলকে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে মেরেছেন। তাঁর সম্মানার্থে আমরা রোজা রাখি। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমরা তোমাদের চেয়েও মুসা (আ.)-এর অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি এ দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।’ (মুসলিম)

হজরত হুসাইন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর ৬১ হিজরিতে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদের বাহিনীর হাতে তিনি নির্মমভাবে শহীদ হন। এই ঘটনাটি প্রত্যেক মুসলমানের হৃদয়কে রক্তাক্ত করে। কিন্তু আমরা সেই শোক ও কষ্ট প্রকাশ করার জন্য এমন কিছু করব না যা আল্লাহ অপছন্দ করেন । ইসলামী শরীয়তে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের আগে একটি দিনের মর্যাদা, তাৎপর্য ও ফজিলত নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এবং সে অনুযায়ী কাজ করা আবশ্যক। কোনো প্রকার যোগ-বিয়োগের কোনো সম্ভাবনা নেই। কাজেই কোনো দুর্যোগ বা খুশির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো দিন বা মাসের জন্য নতুন কোনো বিধান উদ্ভাবন করা জায়েয নয়, যা স্পষ্ট ধর্মত্যাগের নামান্তর।

  • মাতম মর্সিয়া নামক শোক পরিহার: হোসাইন (রা.) এর শাহাদাতের উপর ভিত্তি করে আশুরা নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি আছে। অনেক কুসংস্কার আছে। তার মধ্যে একটি হল মাতম মর্সিয়া গাওয়া।
  • মর্সিয়া মানে নবীর শোকে নিজের শরীরকে প্রহার করা এবং কাপড় ছিঁড়ে ফেলা। এটা ইসলামে হারাম। এ ব্যাপারে মহানবী (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি (দুঃখে) মুখে চড় মেরেছে, কাপড়ের বুক ছিঁড়ে এবং জাহিলী যুগের মতো হাহাকার করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (বুখারি)
  • প্রথা-রসম- আচার-অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকা: মহররম মাসে রোজা ও তওবা-ইসতেগফারের গুরুত্ব ছাড়া আর কোনো বিশেষ আমল নেই। কিন্তু আশুরাকেন্দ্রিক প্রথা ও রসম বিভিন্ন সমাজে প্রচলিত রয়েছে। ধর্মীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের প্রথা, প্রথা ও কুসংস্কার বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। কিছু কুসংস্কার এমনকি শিরক পর্যন্ত যায়। আল্লাহ সবাইকে এর থেকে হেফাজত করুন।
  • মহররম আরবি বছরের প্রথম মাস। এ মাসের অন্যতম ফজিলতপূর্ণ দিন হলো আশুরা। মহররম ও এই আশুরাকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে অনেক ভ্রান্ত ধারণা ও আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে, যা পরিহার করা উচিত।
  • নফল রোজা: নফল রোজা এ মাসের অন্যতম একটি আমল।

এ মাসের নফল রোজাকে মহানবী (সা.) সর্বোত্তম বলে ঘোষণা করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, রমযানের রোযার পর সর্বোত্তম রোযা হলো আল্লাহর মহররম মাসের রোযা। (মুসলিম)

  • আশুরার রোজা: এ মাসের বিশেষ পুণ্যময় দিন হলো দশম দিন বা আশুরা। আশুরার রোজা রাখা একটি মুস্তাহাব কাজ।

আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে আশা করি যে তিনি এই রোজার মাধ্যমে বিগত বছরের গুনাহ মাফ করবেন।’ (মুসলিম)

  • মহররমের ৯ বা ১১ তারিখে রোজা রাখা: মুসলমানদের জন্য আশুরাতে দুটি রোজা রয়েছে। মহররমের ৯ ও ১০ বা ১০ ও ১১ তারিখ। তবে এ বিষয়ে বর্ণিত সকল হাদীসের সুবিধার্থে ৯, ১০ ও ১০ তারিখ তিন দিন রোজা রাখার কথা কিছু আলেম বলেছেন।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা আশুরার (মহররমের দশম দিন) রোজা রাখ এবং ইহুদীদের বিরোধিতা কর। আশুরার এক দিন আগে অথবা একদিন পরেও  রোজা রাখ।’ (মুসনাদে আহমাদ)

আল্লাহ আমাদের সকল প্রকার বিভ্রান্তি ও বিদআত থেকে হেফাজত করুন। কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আর সকল নবী রাসুল, শহীদ,আহলে বায়াত সহ সকলের প্রতি আমাদের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিন আমিন।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X